সন্তান নেওয়া নিশ্চিত করতে – বেহিসাবি না হয়ে আগ্রহী দম্পতিদের খানিকটা হিসাব নিকাশ করার প্রয়োজন আছে। কেবল ঘন ঘন যৌন মিলন নয়, বরঞ্চ গর্ভ ধারন-এর জন্য ঋতুচক্রের উপযুক্ত সময়ে যৌন মিলন (Sex) হতে হবে ।
গর্ভধারণের সর্বোত্তম সম্ভবনাময় দিন হলো – ঋতুচক্রের বিশেষ “ডিম্বাণু নি:সরণ দিবস”(Ovulation day) – তবে খুব সুনির্দিষ্ট ভাবে এটিকে চিহ্নিত করা কঠিন ।
অপেক্ষাকৃত সহজ হলো “ঊর্বর সময়” (fertile window) চিহ্নিত করা – প্রতি ঋতুচক্রের বিশেষ ছয় দিনের স্থায়িত্যের এই “উর্বর সময়” (Fertile Window) তে নিয়মিত ভাবে (ন্যূনতম একদিন অন্তর) যৌন মিলন – স্ত্রীর গর্ভ ধারণ (conceive)-এর সম্ভবনা সর্বাধিক নিশ্চিত করে ।
আরেকটু বিস্তারিত জানি :
ঋতুচক্র (Menstrual cycle)
মেয়েদের মাসিক -এর প্রথম দিন থেকে এক ঋতুচক্রের গণনা শুরু এবং পরবর্তী মাসিকের শুরুর পূর্ব দিন পর্যন্ত ওই চক্রের সমাপ্তি – যা কম বেশি ২৮ দিন স্থায়ী ( অনেক মহিলার ২২ দিন থেকে ৩৬ দিন-ও হতে পারে )
এই ঋতুচক্রের বিশেষ একটি পর্যায়ে ‘ওভারি’ (Overy) থেকে ডিম্বাণু নিঃসরিত হয় ।
ডিম্বাণু নি:সরণ (Ovulation ) দিবস
ঋতুচক্রের বিশেষ একটি দিনে- (পরবর্তী মাসিক শুরুর ১২-১৪ দিন পূর্বে) ‘ওভারি’ (Overy) থেকে ডিম্বাণু নিঃসরিত হয় । এই “ডিম্বাণু নি:সরণ দিবস” -টি গর্ভধারণের সর্বোত্তম সম্ভবনাময় দিন । অবশ্য এটি নিশ্চিতভাবে নির্ধারণ করা কঠিন।
ঊর্বর সময় (fertile window) গণনা (Ovulation Calculation)
যে কোনো ঋতুচক্রের ভিতরকার – “ডিম্বাণু নি:সরণ দিবস ” (Ovulation day) -কে ষষ্ঠ দিন ধরে পূর্বের ছয় দিনের সীমা-ই হলো “ঊর্বর সময়”।
যে ভাবে ‘ডিম্বাণু নি:সরণ দিবস’ এবং ‘ঊর্বর সময়’ গণনা করতে হবে –
(১) কয়েক মাস ধরে নিয়মিত ভাবে স্ত্রীকে তার ‘মাসিক’ শুরু এবং সমাপ্তির হিসাব রেখে নিজস্ব ঋতুচক্রের গড় স্থায়িত্ব (average length) বুঝতে হবে। যেমন – ১ম মাসে ‘মাসিক’ চললো ২৪ দিন, পরের মাসে চললো ২২ দিন, এর পরেরমাসে হয়তো ২৬ দিন… সেক্ষেত্রে মাসিকের গড় স্থায়িত্ব হয় ২৪ দিন।
(২) তার ভিত্তিতে পরবর্তী ভবিষ্যৎ মাসিক কোন তারিখে শুরু হবে, তা এই ঋতুচক্রেই আন্দাজ করে নিতে হবে ।
(৩) সেই আন্দাজকৃত ভবিষ্যৎ তারিখ থেকে ১২ -১৪ দিন বিয়োগ করলে (পিছালে) আসন্ন ঋতু চক্রের বিশেষ “ডিম্বাণু নি:সরণ দিবস ” (ovulation day) – পাওয়া যাবে ।
(৪) “ডিম্বাণু নি:সরণ দিবস ” -কে ষষ্ঠ দিন ধরে পূর্বের / আগের ছয় দিনের সীমা-ই হলো “ঊর্বর সময়” ।
উদাহরণ :
# মাসিকের প্রথম দিন : ২রা মার্চ
# ঋতুচক্রের গড় স্থায়িত্ব : ২৪ দিন
# তা হলে, ঋতুচক্রের শেষ দিন : ২৫সে মার্চ
## অতএব, “ডিম্বাণু নি:সরণ দিবস ” (ovulation day) : (২৫-১২=) ১৩ ই মার্চ
## “ঊর্বর সময়” (fertile window) : ৮ই মার্চ – ১৩ই মার্চ – গর্ভ ধরণের সর্বোত্তম সময়। এই ছয় দিন নিয়মিত যৌন মিলন করতে হবে সাফল্য লাভের উদ্দেশ্যে।
ডিম্বাণু নি:সরণ দিবস (ovulation day) নির্ণয়ের আরো কিছু পন্থা
# দেহ-তাপমাত্রা বৃদ্ধি (Basal Body Temperature) : Basal Temperature হলো কারুর দেহ তাপমাত্রা – যখন সে পূর্ণ বিশ্রামে আছে, যেমন -সকালের প্রথম ঘুম ভাঙার পরপর-ই (বাথরুমে যাবারও আগে) কিংবা ন্যূনতম ৩ ঘন্টার নিরবিচ্ছিন্ন ঘুমের পর বিছানায় থাকা অবস্থাতেই খালি পেটে , শরীরের তাপমাত্রা নিতে হবে,
সাধারণত হরমোনের প্রভাবে “ডিম্বাণু নি:সরণ” (Ovulation) – পূর্ব মুহূর্তে দৈহিক তাপমাত্রা খানিকটা কমে গেলেও , এর পরপরই তাপমাত্রার আকস্মিক বৃদ্ধি ঘটে এবং কয়েকদিন ধরে এই উচ্চ তাপমাত্রা থাকে ।
প্রতিদিন একই সময়ে বিশেষ basal থার্মোমিটার-এর মাধ্যমে (যা সুক্ষভাবে দাগাঙ্কিত – ক্ষুদ্র তাপমাত্রা বৃদ্ধি-ও বোঝার জন্য) এই তাপমাত্রা নিতে হবে – এবং চার্ট করতে হবে কয়েক ঋতুচক্র ধরে । Basal temperature -এর লগ / গ্রাফ থেকে একটা প্যাটার্ন / ছক পাওয়া যাবে এবং অনুমান করা সহজ হবে -কখন পরবর্তী ‘ডিম্বাণু নি:সরণ ’ (Ovulation) হচ্ছে ।
# সার্ভিক্স -নি:সরণ (Cervix Mucus) পরিবর্তন : মাসিকের পর সাধারণত সার্ভিক্স নিঃসৃত রস (মিউকাস) থাকে শুষ্ক, এরপর হয় আঠালো, ঘন। এই মিউকাস / রস Ovulation–এর আগে আগে হয়ে যায় স্বচ্ছ, পিচ্ছিল ও ইলাস্টিক টাইপের । …. কিন্ত ডিম্বাণু নি:সরণ দিবসে মিউকাস / রস হয় সাদাটে (raw egg) এবং ঘন, পরিমাণেও বেশি রস সার্ভিক্স থেকে নির্গত হয় । যৌন মিলনের সময় একটু খেয়াল করলেই এই পরিবির্তন টুকু চোখে পড়া উচিত বিশেষত স্বামীর ।
# Ovulation Kit : ‘ডিম্ নিঃসরণ দিবস’ (Ovulation day) চিহ্নিত করার জন্য বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিশেষ কীট পাওয়া যায় ।
প্রস্রাবে LH ( luteinizing) নামে সব সময় এক বিশেষ হরমোন থাকে। এটি ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টা আগে আকস্মিক খাড়া ভাবে বেড়ে গিয়ে স্ত্রী দেহে ‘ovulation’ ঘটায় অর্থাৎ ওভারি (Overy) থেকে ডিম্ নির্গত করায় । এই কীট / স্ট্রিপ ব্যবহার করে LH হরমোনের পরিমানের উপর কয়েকদিন ধরে চোখ রাখলে এমনকি ৬/৭ দিন আগেই Ovulation Day-এর -এর ইঙ্গিত পাওয়া যায় । প্রস্তূতকারী কোম্পানিগুলো তাদের এসব কীট-কে ৯৯% সঠিক বলে দাবি করে ।
আরো কিছু Ovulation সনাক্তকারী দৈহিক পরিবর্তন স্ত্রী দেহে ঘটতে পারে (যা সব সময় সবার ক্ষেত্রে দেখা না-ও যেতে পারে ।)
যেমন :
# মোচড়ানো ব্যথা (Crampting ) পেলভিক হাড়ের একদিকে,
# হালকা রক্ত-স্পট (Light spotting)- ঋতুচক্রের মাঝামাঝি সময়ে,
# স্তন ব্যাথা / স্পর্শকাতরতা (tenderness),
# যৌন মিলনের ইচ্ছা প্রবল হওয়া, ইত্যাদি.
————– to be cont’d ————