ত্রূটিমুক্ত গর্ভ ধারণ আর সুস্থ সবল সন্তান নিশ্চিত করতে সমন্বিত প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে কতিপয় পদক্ষেপ অনুসরণ করা জরুরী
প্রথম ধাপ : মা হবার সিদ্ধান্তটি ঐক্যবদ্ধভাবে নিন – পারিবারিক (স্বামীর সাথে) আলোচনা করুন -শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত গর্ভ ধারণ প্রক্রিয়াটিতে স্বামীরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে।
দ্বিতীয় ধাপ : গাইনোকলজিস্ট বা ডাক্তার –এর সাথে “গর্ভধারণ–পূর্ব” এপয়েন্টমেন্ট করুন। (Pre-Conception Appointment)
যে বিষয়গুলো ডাক্তারকে আপনার এবং আপনার স্বামীর জানাতে হবে –
– ব্যক্তিগত শারীরিক অবস্থা – বর্তমান এবং অতীত
– ‘স্বাস্থ্য পরীক্ষা’ সর্বশেষ কখন করিয়েছেন (নতুন করে হয়তো রক্ত পরীক্ষা, পেলভিক-এর আল্ট্রাসাউন্ড,পেপ স্মিয়ার ইত্যাদি করতে হতে পারে।)
– ‘টিকা’ কি কি দেয়া আছে (বিশেষত ‘Rubella’ / ‘Chicken Pox’ / ‘Influenza’ / ‘Flue’ etc)
– বর্তমান ও অতীতের রোগ ব্যাধি – নিজের এবং পারিবারিক / বংশগত (ডায়বেটিস, ব্লাড প্রেসার , রক্তশূন্যতা, যৌন রোগ, গর্ভপাত, শিশুর বিকলাঙ্গতা ইত্যাদি)
– ওষুধ পত্র কি খান (প্রচলিত অনেক ওষুধ-ই গর্ভ ধারনের সময়ে, এমনকি ২/৩ মাস আগে থেকেই নিষিদ্ধ !- একান্ত প্রয়োজনে বিকল্প ওষুধ ডাক্তার দেবেন )
– আপনার খাদ্য অভ্যাস
-দৈনন্দিন কর্ম কান্ড/ ব্যায়াম
-ধূমপান / মদ্যপান / মাদক সেবন ইত্যাদি
ডাক্তার এ সব তথ্যের ভিত্তিতে নিরুপন করতে চেষ্টা করবেন :
– এই গর্ভ ধারণে আপনার নিজের জন্য বা ভবিষ্যৎ শিশুর জন্য কোনো ঝুঁকি আছে কিনা
– আপনার ডায়বেটিস / ব্লাড প্রেসার ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে কিনা কিংবা
– আপনার কোনো অতিরিক্ত ‘ভাইটামিন’/ ‘আয়রন’ / ‘ফলিক অ্যাসিড’ ইত্যাদি খাওয়া শুরু করতে হবে কিনা
তৃতীয় ধাপ : ‘জীনগত (Genetic) অস্বাভাবিকতা পরীক্ষা’ করানো বুদ্ধিমানের কাজ কারণ স্বামী / স্ত্রীর ‘জীন’গত অস্বাভাবিকতা থাকলে শিশু অস্বাভাবিক (Autism) হওয়ার সম্ভবনা বাড়ে
চতুর্থ ধাপ : পর্যাপ্ত ফলিক অ্যাসিড (খাবার অথবা ওষুধ হিসাবে) খেতে হবে – গবেষণায় প্রমাণিত যে মায়ের শরীরে ফলিক অ্যাসিড অপর্যাপ্ত হলে গর্ভের শিশুর “Spina bifida” (Neural Tube Defect / স্নায়বিক বিকলাঙ্গতা) হওয়ার ভয় থাকে। ফলিক অ্যাসিড আরো কিছু জন্মগত ত্রূটি /জটিলতা রোধেও সহায়ক ভূমিকা রাখে। – মায়ের ফলিক অ্যাসিড গ্রহণের পরিমান হওয়া উচিত দৈনিক ন্যূনতম 400 mcg (micrograms) । খাদ্য থেকে না আসলে, ওষুধ হিসাবে তা খাওয়া শুরু করতে হবে গর্ভ ধরণের ২/৩ মাস আগে থেকেই এবং চলতে থাকবে কমপক্ষে গর্ভ ধারণের ১২/১৩ সপ্তাহ পর্যন্ত।- সাম্প্রতিক একটি জরিপে অবশ্য – মাতৃ দেহে অত্যাধিক মাত্রায় ফলিক অ্যাসিড-এর উপস্থিতিকে শিশুর অটিজম -এর সাথে সম্পর্কিত করা হয়েছে। যদিও সংশ্লিষ্ট অনেকে এই জরিপের শুদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ….. তথাপি সতর্কতা হিসাবে .. মায়েদের উচিত নিয়মিত রক্তে ফলিক অ্যাসিড-এর পরিমান পরীক্ষা করানো এবং ১২/১৩ সপ্তাহ শেষে অর্থাৎ দ্বিতীয় ট্রাইমিস্টার থেকে (ততদিনে গর্ভের শিশুর নিউরাল টিউব গঠিত হয়ে যায়) নিয়মিত পরিমানের বাইরে, অত্যাধিক ফলিক অ্যাসিড আর সেবন না করা।
পঞ্চম ধাপ : বিশেষ “গর্ভ ধারন পুষ্টি ট্যাবলেট” (Pregnancy Suppliment) খাওয়া শুরু করা – গর্ভ ধারণের ২/১ মাস আগে থেকেই এবং তা চলবে সম্পূর্ণ গর্ভ কালীন সময়ে । Australia-তে সর্বাধিক পরামর্শকৃত “ELEVIT” – যা মেয়েদের গর্ভধারণে প্রয়োজনীয় সব ভিটামিন, খনিজ,ফলিক অ্যাসিড, আয়রন, ক্যালসিয়াম ইত্যাদির যথাযথ কম্বিনেশন। বাংলাদেশে গাইনোকোলজিস্ট-এর পরামর্শ ক্রমে অনুরূপ কোনো ব্রান্ডের ওষুধ খেতে হবে।